,

কলেজ অধ্যক্ষকে পেটানোর অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে

রাজশাহী ব্যুরো:  রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁর নির্বাচনী এলাকার এক কলেজের অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মারধরের শিকার ওই অধ্যক্ষের নাম মো. সেলীম রেজা। তিনি গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ।

গত ৭ জুলাই রাতে রাজশাহী নিউ মার্কেট এলাকায় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর থিম ওমর প্লাজার পাশে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ওই অধ্যক্ষকে পেটানো হয়।

মারধরের শিকার হয়েও ওই অধ্যক্ষ বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন। আজ বুধবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার সকাল থেকে অধ্যক্ষ সেলীম রেজার মোবাইল নম্বরে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। দুপুর থেকে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া কথা বলার জন্য দুপুরে রাজশাহী নগরীর পূর্ব রায়পাড়া এলাকায় তাঁর বাড়িতে গেলেও কেউ দরজা খোলেননি। তবে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ঘটনার তিন দিন পর সংসদ সদস্য তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাকে দেখাও করতে বলেছেন।

তবে গোদাগাড়ীর একটি কলেজের এক অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, ভয়ে ওই অধ্যক্ষ সিরাজগঞ্জে তাঁর গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।

রাজশাহী জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা দাবি করেছেন, ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ সেলীম রেজার সাথে তাঁর কথা হয়েছে। সেলীম রেজার বরাত দিয়ে শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘আরো সাত-আটজন শিক্ষকের, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের সামনে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী সেলীম রেজাকে কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় এবং একপর্যায়ে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছেন। মারধরের সময় অন্য অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা চুপচাপ ছিলেন। ’

অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘ওমর ফারুক চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকার কলেজের শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে চাপে রাখেন। তিনি গোদাগাড়ী-তানোরের কোনো শিক্ষককে সমিতিতে আসতে দেন না। তাঁর ভয়ে কেউ আসতে পারেন না। এখন মারধরের বিষয়টি জানানো হলে আমি বলেছি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। তাহলে বিষয়টা নিয়ে আমি মাঠে নামব। তা না হলে না। অভিযোগ না করলে পরে আবার পালিয়ে যাবে। অতীতে এ রকম বহু ঘটনা দেখেছি। ’

ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক অধ্যক্ষ মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের একজন শিক্ষক আরেক কলেজের এক অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগের নেতার স্ত্রী ও সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এই নালিশ যায় ফারুক চৌধুরীর কাছে। এ কারণে ওই নারীর স্বামী ও কলেজের অধ্যক্ষকে দিয়েই ফোন করে গোদাগাড়ীর আটটি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ফোন করে ডাকান ফারুক চৌধুরী।

এরপর ওই রাতে তারা গেলে ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলীম রেজার কাছে জানতে চান, তাঁর কলেজের শিক্ষক আরেক কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। জবাবে অধ্যক্ষ সেলীম রেজা বলেন, এ রকম কোনো বিষয় তাঁর জানা নেই। প্রমাণ পেলে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।

এ সময় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী একটি অডিও রেকর্ড শুনিয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি উঠে গিয়েই সেলীম রেজাকে মারধর শুরু করেন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সবার সামনে তাকে পেটানো হয়। পরে অন্য অধ্যক্ষরা তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসার পর তাকে বাসায় পৌঁছে দেন। এ ঘটনার পর লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন না সেলীম রেজা। তবে ঘটনা জানাজানি হলে আতঙ্কে তিনি বাড়ি ছেড়েই চলে গেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুধবার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমের কাছে অধ্যক্ষকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে শিক্ষকরা মারামারি করলে তিনি থামান বলেও দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।

ঘটনাটি ঘটেছিল রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায়। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকরাই ফোন করছেন। তাঁদের কাছেই এ ধরনের ঘটনা শুনলাম। কিন্তু ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ আমাদের কিছু জানাননি। যতক্ষণ তিনি লিখিত অভিযোগ না করবেন, ততক্ষণ আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। ’

এই বিভাগের আরও খবর